পদার্থের রাসায়নিক ধর্ম কাকে বলে ? রাসায়নিক ধর্মের উদাহরণ ও বিভিন্ন পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া(Chemical Reactions)।

 

CHEMICAL REACTIONS OF MATTER 


পদার্থের রাসায়নিক ধর্ম: 

যে ধর্মের প্রকাশে পদার্থের গঠনের সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটে, অর্থং পদার্থটি পৃথক ধর্মবিশিষ্ট অন্য একটি নতুন পদার্থে পরিণত হয়, তাকে পদার্থের রাসায়নিক ধর্ম বলে। 


রাসায়নিক ধর্মের সাহায্যে পদার্থের শনাক্তকরণ


(i) বায়ুর ক্রিয়া:

 বায়ুর সংস্পর্শে পদার্থের কোনো পরিবর্তন ঘটে কি না তা লক্ষ করে, পদার্থকে শনার করা যায়। যেমন-আর্দ্র বাতাসে লোহার ওপর মরচে পড়ে, কিন্তু সোনা, রূপার এরূপ কোনে পরিবর্তন ঘটে না।


(ii) জলের ক্রিয়া: 

জলের সঙ্গে পদার্থের বিক্রিয়া লক্ষ করে অনেক পদার্থকে শনাক্ত করা যায়। যেমন-এক টুকরো সোডিয়াম ধাতু জলে ফেললে তীব্র বিক্রিয়া করে কস্টিক সোডা ও হাইড্রোজেন পদার্থের শনাক্তকরণ ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন মিশ্রণের উপাদানগুলির পৃথকীকরণ ধাতু, অধাতু ও ধাতুকল্প গ্যাস উৎপন্ন করে। কিন্তু, এক টুকরো সোনা বা রূপা জলে ফেললে এরূপ ঘটনা ঘটে না। অ্যালুমিনিয়াম গরম জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। বেশির ভাগ ধাতুই ঠান্ডা জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না। ক্যালশিয়াম অক্সাইড জলের সংস্পর্শে আসামাত্রই বিক্রিয়া করে এবং ক্যালশিয়াম হাইড্রক্সাইড ও প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে। চিনি জলে দিলে দ্রবীভূত হয়, কিন্তু কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া করে না।


(iii) তাপের ক্রিয়া: 

তাপের প্রভাবে পদার্থের কীরূপ পরিবর্তন ঘটে তা লক্ষ করেও পদার্থকে শনাক্ত করা যায়। যেমন-সাদা চুনাপাথরকে উত্তপ্ত করলে চুন পাওয়া যায়, কিন্তু সাদা সোডিয়াম কার্বনেটকে উত্তপ্ত করলে এরূপ কোনো পরিবর্তন হয় না। উজ্জ্বল চকচকে পারদকে উত্তপ্ত করলে লাল বর্ণের মারকিউরিক অক্সাইড এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড পাওয়া যায়। কিন্তু সোনাকে উত্তপ্ত করলে কোনো পরিবর্তন হয় না। ম্যাগনেশিয়াম ধাতুর তার উত্তপ্ত করলে উজ্জ্বল শিখায় জ্বলে এবং ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড গঠন করে, অর্থাৎ রাসায়নিক পরিবর্তন হয়। আবার প্ল্যাটিনাম ধাতুর তার উত্তপ্ত করলে উজ্জ্বল শিখায় জ্বলে, কিন্তু ঠান্ডা করলে পূর্বেকার অবস্থায় ফিরে আসে। অর্থাৎ কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন হয় না। সুতরাং, তাপ প্রয়োগে ধাতুগুলির আচরণের ভিন্নতা লক্ষ করে ওদের শনাক্ত করা যায়।


(iv) অ্যাসিডের ক্রিয়া: 

পদার্থের ওপর অ্যাসিডের ক্রিয়া লক্ষ করে অনেক পদার্থ শনাক্ত করা যায়। যেমন-জিঙ্কের সঙ্গে লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় বুদ্বুদ আকারে হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হয়। কিন্তু ওই একই অ্যাসিডের সঙ্গে তামা, সোনা, রুপার এরূপ কোনো বিক্রিয়া হয় না।


(৩) ক্ষারের ক্রিয়া: 

পদার্থের ওপর ক্ষারের বিক্রিয়া লক্ষ করে অনেক পদার্থকে শনাক্ত করা যায়। যেমন-জিঙ্ক বা অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে ক্ষার দ্রবণ মিশিয়ে উত্তপ্ত করলে হাইড্রোজেন গ্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু লোহা, কার্বন, তামা প্রভৃতির সঙ্গে ক্ষারের এরূপ কোনো বিক্রিয়া হয় না। আবার, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ঝাঁজালো গন্ধযুক্ত গ্যাস অ্যামোনিয়া উৎপন্ন করে অথচ সোডিয়াম ক্লোরাইডের সঙ্গে ক্ষারের কোনো বিক্রিয়া হয় না।


(vi) সংস্পর্শে রাসায়নিক বিক্রিয়া: 

কতকগুলি পদার্থ পরস্পরের সংস্পর্শে এলে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায় এবং নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়। যেমন-চুনে জল দিলে কলিচুন এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। সাদা ফসফরাস আয়োডিনের সংস্পর্শে এলেই জ্বলে ওঠে এবং ফসফরাস ট্রাই-আয়োডাইড উৎপন্ন হয়।


(vii) তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া: 

কিছু কিছু পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে পদার্থগুলি বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়। আবার, কোনো কোনো পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালেও পদার্থগুলির কোনো পরিবর্তন ঘটে না। যেমন-অ্যাসিড মিশ্রিত জলের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পাঠালে জল বিশ্লিষ্ট হয়ে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনে পরিণত হয়। কিন্তু, চিনির দ্রবণে তড়িৎ পাঠালে এরূপ কোনো পরিবর্তন ঘটে না।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad